বাংলাদেশ কপিরাইট আইন এর বিভিন্ন দিক তুলে ধর।
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন সৃষ্টিশীল কাজের মালিকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য প্রণীত। বর্তমান কপিরাইট আইনটি হলো বাংলাদেশ কপিরাইট আইন, ২০০০ (The Copyright Act, 2000), যা কপিরাইটের অধিকার এবং ব্যবহারের নিয়মাবলী নির্ধারণ করে। এই আইনের বিভিন্ন দিক নিম্নরূপ:
1. কপিরাইটের সংজ্ঞা:
- কপিরাইট আইন অনুসারে সৃষ্টিশীল কাজের (যেমন সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকর্ম, নাটক, ফিল্ম, প্রোগ্রাম, সফটওয়্যার) উপর মালিকের একক অধিকার রয়েছে।
- এটি একটি আইনি অধিকার যা কাজের স্রষ্টাকে তার সৃষ্ট কাজের প্রকাশ, বিতরণ, কপি, প্রচার এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়।
2. কপিরাইটের সময়কাল:
- সাধারণত, কপিরাইট সৃষ্টিকর্তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর আরও ৬০ বছর পর্যন্ত বজায় থাকে।
- এই সময়কালে, কপিরাইটধারী বা তার অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিই কেবল সেই কাজের বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে পারেন।
3. নিবন্ধন প্রক্রিয়া:
- কপিরাইটের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য, কাজকে কপিরাইট অফিসে নিবন্ধন করতে হয়।
- যদিও নিবন্ধন ছাড়াও কপিরাইট অধিকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া যায়, নিবন্ধন করলে আদালতে প্রমাণ হিসেবে তা সহজে গ্রহণযোগ্য হয়।
4. কপিরাইট ভঙ্গের শাস্তি:
- যদি কেউ কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে অন্যের সৃষ্টিশীল কাজ কপি করে বা ব্যবহার করে, তবে সেটি কপিরাইট ভঙ্গ বলে গণ্য হয়।
- কপিরাইট ভঙ্গের জন্য শাস্তি হিসেবে জরিমানা এবং কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। জরিমানা সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং কারাদণ্ড হতে পারে ৬ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত।
5. কপিরাইট ব্যতিক্রম:
- কিছু ক্ষেত্রে কপিরাইট আইন ভঙ্গ না করেই সৃষ্টিশীল কাজের ব্যবহার করা যায়, যেমন শিক্ষামূলক বা গবেষণা কার্যক্রম।
- "Fair Use" বা ন্যায্য ব্যবহারের নিয়ম অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কপিরাইটেড কাজের অংশবিশেষ কপি করা বা ব্যবহার করা যায়, যদি সেটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে না হয়।
6. লাইসেন্স ও অনুমতি:
- কপিরাইটধারী তার সৃষ্ট কাজ অন্যকে ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারে, যা লাইসেন্স আকারে হতে পারে।
- লাইসেন্সের মাধ্যমে কপিরাইট মালিক কাজের সম্পূর্ণ বা আংশিক ব্যবহার, কপি, বা বিতরণের অনুমতি দেয় এবং এর বিনিময়ে অর্থ বা রয়্যালটি গ্রহণ করতে পারে।
7. প্রযুক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা:
- কপিরাইট আইন ডিজিটাল মাধ্যমের সৃষ্টিশীল কাজ সুরক্ষিত করার জন্য বিশেষ নিয়মাবলী প্রদান করে।
- ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে সৃষ্টিশীল কাজের কপি বা চুরি প্রতিরোধে ডিজিটাল রাইটস ম্যানেজমেন্ট (DRM) ব্যবস্থার অনুমোদন দেয়।
8. অভিযোগ ও মামলা দায়ের:
- কপিরাইট ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে, কপিরাইট মালিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
- আইন অনুসারে, কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগ তদন্ত ও বিচার করার জন্য কপিরাইট বোর্ড রয়েছে।
9. আন্তর্জাতিক কপিরাইট সুরক্ষা:
- বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কপিরাইট চুক্তি, যেমন বার্ন কনভেনশন এবং ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (WIPO) এর সদস্য। এর ফলে বাংলাদেশের কপিরাইট আইন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা রয়েছে।
10. সফটওয়্যার কপিরাইট:
- কম্পিউটার সফটওয়্যারও কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত। সফটওয়্যারের অযাচিত কপি তৈরি বা ব্যবহার কপিরাইট লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়।
উপসংহার:
বাংলাদেশের কপিরাইট আইন সৃষ্টিশীল কাজের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি স্রষ্টাদের তাদের কাজের উপর সম্পূর্ণ অধিকার প্রদান করে এবং অন্যরা যাতে সঠিক অনুমতি ছাড়া সেই কাজ ব্যবহার করতে না পারে তা নিশ্চিত করে।
Post a Comment